চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় রাজধানীর অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাসের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। এ বছর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জিপিএ-৫-এর সংখ্যাও।
চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৫৪৯ জন শিক্ষার্থী, যা মোট কৃতকার্য শিক্ষার্থীর ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছরের জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯৫৬ জন বা মোট পরীক্ষার্থীর ৮০ শতাংশ। আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার ফল এসব তথ্য জানা যায়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর মতিঝিল আইডিয়াল মোট ২ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। পাশের হার ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ২৩৪ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫০৯ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৫২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ জন। মোট জিপিএ-৫-এর শতকরা হার ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া অকৃতকার্য হয়েছেন ৫৪ জন শিক্ষার্থী।
গত বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমার বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদাউস বলেন, পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে ক্লাস পায়নি। এছাড়া সিলেবাসেও কিছু সমস্যা ছিলো। এ কারণে তাদের মধ্যে শিখন ঘাটতি ছিলো।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের ‘মার্সি নম্বর’ দেওয়ার প্রবণতা ছিলো। এবার সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে প্রাপ্য নম্বরই দিতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনাকে আমরা স্বাগত জানাই। শিক্ষার্থীরা ঢালাওভাবে নম্বর পেয়ে পাস করলে অনেক সময় দেখা যায় তারা সামনে গিয়ে ভালো করতে পারে না, এটা কাম্য নয়। এজন্য আপাতদৃষ্টিতে কিছু ফেল থাকলেও ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে পরীক্ষায় বসবে।
অন্যদিকে, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে দুপুর দুইটার আগে থেকে বিদ্যালয়ে ভীড় করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ফল ঘোষণার পরপরই অনেককে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ নিতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন। অভিভাবকরাও সন্তানের ফল জানার পর শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী রাইসা এবার গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এই সাফল্যের কৃতিত্ব তিনি সৃষ্টিকর্তা, পরিবার এবং শিক্ষকদের দেন। জুলাই আন্দোলনের প্রভাব তার ওপর পড়েছিলো কী না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রভাব অবশ্যই পড়েছে। এই আন্দোলনে আমার অনেক কাছের মানুষ শহীদ হয়েছেন। এরপরও আমরা পরীক্ষা দিয়েছি এবং ভালো করেছি।
ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল হোসেনের মেয়ে লাবিবা তাবাসসুম এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এতে খুশি এই বাবা। তিনি বলেন, নবম শ্রেণি থেকেই আমার মেয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছে। সিলেবাস তখনই শেষ করে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব যেন আমার মেয়ের ওপর না পড়ে; সে কারণে তাকে মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছি। যার ফলে পরীক্ষায় ভালো করেছে।